অনলাইন ডেস্ক:
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন রংপুরের কাউনিয়ার রেজিয়া বেগম। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে ভিসায় ছবি লাগানোর কাজ করতেন তিনি। থাকতেন হাজারীবাগ এলাকায়। ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেত্রী আয়শা মোকাররমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে রেজিয়া বেগমের সরব উপস্থিতি ছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার জনসভায় আয়শা মোকাররমসহ আরো ২০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী মিছিল নিয়ে যোগ দেন। জনসভা চলাকালীন হঠাৎ ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা। ঘটনাস্থলেই মারা যান রেজিয়া বেগমসহ ২৪ জন। পরদিন ২২ আগস্ট রেজিয়ার বাবা আফাজ উদ্দিন ঢাকায় গিয়ে তার মরদেহ সনাক্ত করেন। পরে তাকে ঢাকা আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার কাউনিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, সরকারি অনুদানের টাকা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন নিহত রেজিয়ার দুই ছেলে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের আট লাখ টাকা এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ২৪ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দিয়েছিলেন এক লাখ টাকা।
নিহত রেজিয়ার বড় ছেলে হারুন-উর-রশীদ বলেন, মায়ের আদর কেমন গত ১৬ বছরে তা ভুলে গেছি। বর্তমানে কোনোমতে সংসার চললেও মাতৃস্নেহের জন্য বুকটা ফেটে যায়।
বর্বরোচিত সেই ২১ আগস্টের হামলার রক্তাক্ত ছবি দেখলেই আজও আঁতকে ওঠেন রেজিয়ার অন্য স্বজনরাও। হারুন বলেন, মায়ের মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকেই শয্যাশয়ী ছিলেন নানা আফাজ উদ্দিন। মেয়ের মৃত্যুতে তিনি আরো ভেঙে পড়েন। তার ছবি বুকে নিয়ে শুধুই কাঁদতেন। মানুষ দেখলেই জানতে চাইতেন রেজিয়া হত্যার বিচার হবে না! শেষ পর্যন্ত মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি তিনি। ২০১৫ সালের ২৯ জুন না ফেরার দেশে চলে যান নানা আফাজ উদ্দিন।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের আরাজি শাহবাজ গ্রামে থাকেন হারুন-উর-রশীদ। জীর্ণ ঘরে তাদের বাস। কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পাওনা টাকা দিয়ে কিছু জমি বন্ধক নেওয়াসহ কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। একমাত্র মেয়ে হালিমাকে ডিগ্রি পাশ করার পর বিয়ে দিয়েছেন। গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগম বড় নাতনী হিসেবে তাকে খুব আদর করতেন এবং তাকেও তিনি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন হারুন।
রেজিয়ার ছোট ছেলে নূরনবীও অনুদানের টাকায় গরু লালন-পালন করছেন। বাকি টাকা রেখেছেন ব্যাংকে। থাকেন বালাপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানারায়ন গ্রামে। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনোমতে দিন চলে যাচ্ছে। কিন্তু মাতৃস্নেহের জন্য বুকটা ফেটে যায়। তাদের প্রতি আন্তরিক হওয়ায় রেজিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগমের পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে বালাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিবারটির ওপর সব সময় সদয় দৃষ্টি রেখে চলেছেন। আমরা দলের পক্ষ থেকেও পরিবারটির খোঁজ খবর রাখছি।